সিনেমাঃ কেদারা
পরিচালকঃ ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত
মুখ্য অভিনয়েঃ কৌশিক গাঙ্গুলি, রুদ্রনীল ঘোষ
সময়ঃ ১ ঘণ্টা ৫২ মিনিট
প্রাপ্তিস্থানঃ হইচই
প্রথমে পরিচালকের নাম দেখে একটু চমকে যেতে হয়। আমার মতো অনেকেই সিনেমায় কৌশিক গাঙ্গুলিকে দেখে ভাবতে পারেন উনি এই সিনেমার পরিচালক। "কম্পোজার" ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের পরিচালক হিসেবে এটাই প্রথম সিনেমা। তবে ডেবিউ ছবি হিসেবে দর্শকদের হতাশ করেননি পরিচালক।
নরহরি (কৌশিক গাঙ্গুলি) একজন হরবোলা যার এক সময় দারুণ খ্যাতিও ছিল। অনেক জায়গায় যেতেন, স্টেজ শো করতেন, টিভি শো করতেন। কিন্তু বার্ধক্যে পৌঁছে সেই খ্যাতি ম্লান হয়ে গিয়েছে। এখন সেই খ্যাতিই তার বিড়ম্বনার কারণ। নরহরির স্ত্রী তাকে ছেড়ে ছেলেকে নিয়ে চলে গেছে। একা নরহরি বাড়িতে বসে বিভিন্ন লোকের গলায় কথা বলে সময় কাটানোর চেষ্টা করে। এক একাই কখনো নিজের ঠাকুমার গলায়, কখনো সংবাদ পরিবেশকের গলায়, কখনো পশুপাখির ডাক ডাকে। তাই নিয়ে পাড়ার ছেলে ছোকরারা টিটকিরি করে, ব্যঙ্গ করে। এক কাজের ঝি আছে সেও চা বানানো নিয়ে বাইরের লোকের সামনে নরহরিকে বকাঝকা করে। ন্যূনতম প্রতিবাদ করার সাহসটুকু পর্যন্ত তার নেই। এরই মাঝে একদিন নরহরি কেষ্টর (রুদ্রনীল ঘোষ) কাছে আবদার করে একটা পুরোনো কোনো ভালো কেদারার। কেষ্ট পুরোনো জিনিসপত্র কেনাবেচা করে। তাই শুনে কেষ্ট এক রাজবাড়ী থেকে একটা পুরোনো রাজকীয় কেদারা এনে দেয় নরহরিকে। সেই কেদারায় বসার পর থেকেই নরহরির জীবনে ঘটতে থাকে অদ্ভুত সব ঘটনা। গোবেচারা নরহরির জীবনে কী পরিবর্তন আসে এবং শেষ পর্যন্ত তার অবহেলার জীবন থেকে সে মুক্তি পাবে কিনা তাই নিয়ে এগোয় কেদারার কাহিনী।সিনেমাতে নরহরি একজন অবহেলিত মানুষের প্রতিমূর্তি। যাকে সবার ঠাট্টা, ব্যঙ্গ বিদ্রুপ সহ্য করে বাঁচতে হয়। নিরীহ দেখে সবাই পেয়ে বসে। সিনেমার কৌশিক গাঙ্গুলির অভিনয় নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। বরাবরের মতোই তিনি অসাধারণ অভিনয় করেছেন। উনার অভিনয় যত দেখি ততই মুগ্ধ হতে হয়। কেষ্টর চরিত্রে রুদ্রনীল পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন কৌশিক গাঙ্গুলির সঙ্গে। সিনেমায় রুদ্রনীল এর কিছু ডায়লগ আপনাকে "কমিক রিলিফ" দিতে পারে। নরহরির স্ত্রী হিসেবে ছোট্ট ভূমিকায় বিদীপ্তা চক্রবর্তী খারাপ নয়। শেষ পাতে অনির্বাণের গলা ভালই লাগবে।
তবে বেশ কিছু জিনিস আপনার ভালো নাও লাগতে পারে। যেমন সিনেমাটা অনেক স্লো চলছে বলে মনে হতে পারে। ১০-১৫ মিনিট অনায়াসে কমানো যেতে পারতো। সিনেমা দেখতে দেখতে কোনো ভৌতিক গল্পের কাহিনীর সঙ্গে আপনি সাদৃশ্য খুঁজে পেতে পারেন। যদিও সিনেমাটা ভৌতিক নয় কিন্তু মনে হতে পারে এমন গল্প আগে পড়েছেন কোথাও। স্ক্রিনে বেশিরভাগ সময় জুড়ে কৌশিক গাঙ্গুলিকে দেখতে দেখতে বোর লাগতেও পারে। সিনেমার শেষ অংশে রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ার ফলস্বরূপ কী ঘটতে পারে সে বিষয়ে নরহরির জানা আছে। তা সত্ত্বেও যখন পার্টির লোকজন তার ক্ষতি করতে এলো তখন নরহরির আচার আচরণ সিনেমার প্লটে দুর্বল লেগেছে। সিনেমার মিউজিক মোটামুটি। তবে সব মিলিয়ে সিনেমাটা দেখতে খারাপ লাগবে না।
留言